বাবার স্মরণে

মানুষের দেহ থেকে প্রাণ চলে গেলেই তার গুরুত্ব বোধহয় কিছুটা কমে যা। নিথর দেহ অপেক্ষায় থাকে কখন সেটার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। সমাধি হয়ে গেলে অপেক্ষায় থাকে কখন মাটির সাথে মিশে - মাটি হবে। এভাবে দেহের অবসান হবে জেনেও আমরা জেগে ওঠার অনেক আশা নিয়ে ঘুমাতে যাই।


গতবছর আমার বাবা মৃত্যু বরণ করেন। টানা ২০ দিন হাসপাতালের আইসিইউ তে উনাকে ৩ বার লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিলো। অদেখা ভাইরাস (করোনা) তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাসে ব্যাঘাত ঘটিয়ে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমিয়ে ফেলেছিলো। যতটুকু সময় তাঁর জ্ঞান ছিল আমি সন্তান হিসাবে তাঁর কষ্ট লাঘব করার জন্য; তাঁকে কিছু Affirmation দিয়ে যাচ্ছিলাম। যাতে কিছুটা হলেও তাঁর মনোযোগ অন্যদিকে রাখা যায়।


“ধর, বড় একটা নদী, মৃদু ঢেউ বইছে। তুমি নৌকায় বসে বৈঠা দিয়ে চষে বেড়াচ্ছ নদীর বুকে। শান্ত বাতাস তোমার শরীর জুড়ায়। পার থেকে তোমার বন্ধুরা তোমায় ডাকছে; তাদের নৌকায় উঠিয়ে নিতে। তুমি তাদের নিয়ে আবার চললে নদীর বুকে। ”


“খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে চন্দিমা উদ্দানে হাঁটাহাঁটি করতে বেড়িয়ে গেলে। সকালের মৃদু বাতাস তোমায় শীতল করে তুলছে। পাখির কলকাকলিতে মুখর, কৃষ্ণচূড়া গাছে গাছে ফুল, হেঁটে যাবার পথে গালিচা বিছিয়েছে। তোমার ডাকছে...।”


বাবার জ্ঞান থাকা পর্যন্ত এইগুলোই বাবার সাথে আমার শেষ কথা ছিলো। আমি জানিনা তাঁর সেই সময়ের অনুভূতি কেমন ছিলো। কিন্তু এতোটুকু বুঝতে পারছিলাম, তিনি শান্ত ছিলো আমার কথাগুলো মন দিয়ে শুনছিল।


আজ বাবার ১ম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর জন্য দোয়া ও ভালোবাসা রইলো। ভালো থেকো আব্বা।