জীবনধারণের দক্ষতা কোথায়? দক্ষতা একটি বিশেষ অর্জন যা জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে
প্রয়োজন হয়ে পড়ে। জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু দক্ষতা অপরিসীম ভূমিকা পালন করে।
জীবনের জন্য দক্ষতা একটি ইতিবাচক আচরণ, যা প্রতিদিনের পরিবেশগত
দাবি এবং সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে সহয়তা করে।
কিছু দক্ষতার নমুনা দেখা যাক।
সামাজিকঃ
১. আত্ম-সতর্কতা,
২. যোগাযোগের পটুতা,
৩. ব্যক্তিগত সম্পর্ক।
৪. আত্ম-প্রকাশ
ভাবগতঃ
১. সৃজনক্ষম ভাবনা,
২. সমালোচনামূলক ভাবনা,
৩. সিদ্ধান্তমূলক ভাবনা,
৪. সমস্যামূলক ভাবনা
৫. সমাধানমূলক ভাবনা
আবেগময় দক্ষতাঃ
১. চাপ সামলানো,
২. আবেগ সামলানো।
যেহেতু উক্ত মনস্তাত্ত্বিক
বিষয়গুলো নিয়ে পুঁথিগত বিদ্যা এবং শিক্ষা আমাদেরকে দেয়া হয় না, সেহেতু নিজ থেকেই কিছু ইতিবাচকভাবে দক্ষতা অর্জন করাটাই
শ্রেয়। এবং আমারা এই সকল বিষয় নিয়ে কখনো চিন্তা করি না, কিংবা চিন্তা করলেও সঠিক উপায়ে এবং কার্জকরভাবে করা হয়ে
উঠে না। একবার ভেবে দেখেন, বিষয়গুলো আপাতত দৃষ্টিতে হাস্যকর মনে হলেও, মূলত তা জীবন পরিচালনার চালিকা শক্তি। আমাদের কোথাও না
কোথাও দুর্বলতা থেকেই যায়।
সম্প্রতি কিছু পরিসংখ্যান করে
দেখলাম, আমার আশে-পাশের অনেক ব্যক্তিই রয়েছেন এমনকি আমি নিজেও এর
বাইরে নই- তাদের সবারি কিছু না কিছু চাপের মধ্যে থাকতে হয়। এবং
তাদের সাথে আলোচনা করে যা বোধ হল- তা অতি দুঃখজনক, আমরা ইতিবাচক আচরণে
অত্যন্ত আনাড়ি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, একটি চাপ তাঁর অন্যান্য
আনন্দময় সময়গুলোকেও আড়ষ্ট করে রেখেছে। ফলে তাদের সময়গুলো দুঃখের মধ্যে পার হয়।
হতাশা ঘিরে থাকে চারপাশে। কোন সমাধানের পথ খুঁজে পায় না। এমনকি পথ খুঁজে পেলেও তা
থেকে বিচ্যুতি ঘটে। তাঁদের নিষ্ফল হবার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় উঠে এসেছে বারবার, আর তা হল- অদক্ষতা, অসচেতনতা এবং সমস্যার
মাঝে ডুবে থাকা। ব্যক্তিগতভাবে আমার কিছু চিন্তা ভাবনা সবার সাথেই ভাগ করে নিতে
চাই।
তবে চলুন একটি গল্প দিয়ে শুরু করা যাক।
একদা এক পণ্ডিত ব্যক্তি এক নৌকা ভ্রমণে বের হন। নৌকা বয়ে যাচ্ছে নদীর বুকে।
পণ্ডিত ব্যক্তি নিজের পাণ্ডিত্য প্রমানের জন্য নৌকার মাঝিকে বলল, “মাঝি তুমি কি সাইকোলজি বুঝো?” উত্তরে মাঝি বলল,
“না স্যার”।
-তাহলে ফিজিয়লজি বুঝো?
-না স্যার।
-তাহলে মেটেরলজি বুঝো?
-না স্যার।
-তাহলে কোনো লজিই বুঝো না। তোমার জীবনটাই তো বৃথা। এ জীবনে কী করলে?
মাঝি কিছুক্ষণ হেসে জবাব দিল, “স্যার আপনি
কি সাঁতারলজি বুঝেন”
বিহ্বল অবস্থা পণ্ডিতের। যেন তাঁর পাণ্ডিত্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পণ্ডিতমসাই
ভেবে বলল, নাতো, এটা আবার কেমন লজি?
কি ভাবছেন? হতে পারে মাঝির পেশা নৌকা চালানো।
তাঁর জীবিকা অর্জনের জন্যই তাঁর নৌকা বাইতে হয়। মাঝি নিজেকে রক্ষার জন্য সাঁতারলজি
শিখে নিয়েছে। কিন্তু পণ্ডিতমশাই সাঁতারলজি জানে না। এখন কোন এক অজানা কারণে নদীর
বুকে পণ্ডিতমসায়ের জীবন থমকে যেতে পারে, তাই নয় কি?
উক্ত গল্প কিংবা ঘটনা থেকে কি বোঝা যায়? সবার সবকিছু
সম্পর্কে ধারণা থাকে না। কিন্তু কিছু কিছু ব্যপারে ধারণা অথবা দক্ষতা থাকতেই হয়।
হয়তো সেই দক্ষতা তাঁর চাপ মুহূর্তের কিছু সময় বাঁচিয়ে দিবে। সল্প সময়ে সেই সমস্যার
সমাধানে পা বাড়াবে। তবে সবি অনুশীলনের ব্যপার মাত্র। আপনার এবং আমার সঠিক অনুশীলনই
তাঁর উৎকৃষ্ট পন্থা বাতলে দিতে পারে। জীবন বাঁধা-বিপত্তিময়। বিপত্তিহীন জীবন কখনোই
হয় না।
আমরা অনেকেই মনে করি, পাশের মানুষের জীবন কতোটা
সুন্দর এবং মসৃণ। এবং এই ভেবে আফসোসের সীমা থাকে না। খোঁজ নিয়ে দেখেন, তাঁর জীবনটাও অনেক বাঁধা-বিপত্তির ছিল। সেই ব্যক্তি তাঁর দক্ষতা দিয়ে
তাঁর জীবনকে মসৃণ এবং সুখময় করে নিয়েছে।
উদাহরণ হিসাবে একটা প্রশ্ন করি, একজন সৈনিক
যখন যুদ্ধে অংশ নেন। তাঁর আগে তাকে কী কী ধরণের দক্ষতা অর্জন করতে হয়? চটজলদি মাথায় আসছে তো? আসতেই হবে। তাঁর
দক্ষতার মধ্যে রয়েছে- অস্ত্র চালনা প্রশিক্ষণ, প্রতিপক্ষকে
ঘায়েল করার কৌশল এবং আত্ম রক্ষার কৌশল। এই দক্ষতাগুলো অর্জনের মাধ্যমেই সৈনিক তাঁর
যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হন। এবং যুদ্ধে জয় লাভ করেন। এবং সেই জয়ী হয়, যার দক্ষতা খুব ভালো। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, জীবন
সংগ্রামেও সেই রকমের কিছু সংগ্রামী দক্ষতা অর্জন করা কতোটা জরুরী।
এখন কাজের কথায় আসি, জীবনের জন্য যে দক্ষতা
প্রয়োজন তার একটি খসড়া তৈরি করে নিতে পারেন। এবং সেই দক্ষতাগুলো অর্জনের
পদক্ষেপগুলো কী কী হতে পারে তাও সাজাতে পারেন। ধরুন সাজিয়ে ফেলেছেন, এখন সেই অনুযায়ী অনুশীলনের মাঝে থাকুন। আর আপনার সাহায্যের জন্য গুগলিং
করতে পারেন। অনেক অনেক উপাদান রয়েছে। শুধু মাত্র আপনার পদচারনা শুরুর অপেক্ষা। ভাল
থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। বিদায়।