ভালবাসার অপর নাম ভাল থাকা — Heartbroken After a Break Up?

জীবনকে মাঝে মাঝে তুচ্ছ মনে হয়। অনেক হতাশার মাঝে ডুবে থাকতে থাকতে আপনার বিশ্বাসে চির ধরে। নিজেকে সমাজের অবাঞ্ছিত মনে হাওয়া টা অস্বাভাবিক নয়। তবে এমন দুশ্চিন্তায় থাকলে কিছুদিন পর আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সম্মুখীন হতে হবে।
অনেক সময় চলার পথে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে যাই। মানুষ হয়ে জন্মেছি যেহেতু, তাই চলার পথে অনেক মানুষের সাথে সম্পর্কে জড়াবো সেটা স্বাভাবিক। এই সম্পর্ক নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক হতাশা কাজ করে। যদি সম্পর্ক টা সুস্থ না হয়, তবে তো জীবনটাই অর্থহীন!
আমাদের অনেকগুলো অনুভূতির মধ্যে ‘ভালবাসা’ হলো- পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী অনুভূতি। এই অনুভূতি দিয়ে নিজের জীবন থেকে শুরু করে পুরো পৃথিবীর মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া সম্ভব। যার অবদান ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকবে।
আমি আজকে শুধুমাত্র প্রেম-ভালবাসার সম্পর্কের ব্যাপারে কিছু আলোচনা করবো। আমাদের মধ্যে অনেকে এই ধরনের সম্পর্ক নিয়ে খুবি হতাশায় ভোগেন। এবং যা খুব স্বাভাবিক। তবে তা যেন বেশি দিন স্থায়ী না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।
একটা কমন বিষয় প্রায় দেখি- অনেক দিন কিংবা বছর পার করে দিচ্ছেন কিন্তু এক্স-গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ডকে ভুলতে পারেন নি। সম্পর্কের ইতি হয়তো অনেক আগে হয়েছে, নতুন কাওকে গ্রহণ করতে পারছেন না মন থেকে। অনেক চেষ্টা করেও পারছেন না। যদি এমন হয়ে থাকে তবে বুঝে নিতে হবে আপনার চেষ্টা আশানুরূপ ফলাফল দিচ্ছে না। সেক্ষেত্রে আবার ভিন্নভাবে চেষ্টা করতে হবে।
তবে আমার মতামত- আপনাকে ভুলতেই হবে এমন কেন চিন্তা করছেন? মনে পরবে, মনে থাকবে এক সময়ের ‘প্রিয়’ মানুষটিকে। এমন কি হয় না- এখন যেমন মনে পরলে কষ্ট পান। ঠিক একইভাবে মনে পরলে কষ্ট আর পাবেন না! অনেকেই বলেন সময় গেলে সব ঠিক হয়ে যায়। স্মৃতিগুলো ফিকে হতে শুরু করে তখন কষ্ট কম হয়। এটাও স্বাভাবিক। সময় আপনাকে সব কষ্ট এবং স্মৃতি থেকে দূরে নিয়ে যাবে।
আপনাকে কিছু প্রশ্ন করি। উত্তরগুলো মনে মনে মিলিয়ে নিন।
ক. ব্রেক-আপ হবার পর সেখান থেকে কী কী শিক্ষা পেলেন?
সম্ভাব্য উত্তর- পৃথিবীর সব ছেলে বা মেয়ে এক রকম। কাওকে বিশ্বাস হয় না। সব মিথ্যা মনে হয়।
খ. কষ্ট ভুলতে কী কী করেন?
সম্ভাব্য উত্তর- নেশা করি (ধূমপান অথবা অন্য নেশা জাতীয় দ্রব্য)। আরেকটা সম্পর্কে জড়াতে চেষ্টা করি।
গ. নিজের সম্পর্কে নতুন কিছু জানতে পেরেছেন?
সম্ভাব্য উত্তর- আমি নিজে সৎ ছিলাম। সম্পর্কের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। সে (এক্স-বফ বা গফ) প্রতারণা করেছে। আমি আমার জায়গায় ঠিক ছিলাম।
ঘ. আপনি কি মেনে নিতে পেরেছেন?
সম্ভাব্য উত্তর- না, নিতে পারি নি। ঘটনাগুলো মিলাতে পারি না। কিভাবে পারলো এমন করতে!
ঙ. আপনি কি তাকে ক্ষমা করতে পেরেছেন?
সম্ভাব্য উত্তর- না, পারি নি। অথবা — হ্যাঁ, করেছি। সে ভালো থাকুক।
আমি এখানে একদম সাধারণ কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর দিলাম। সবার একই রকম উত্তর হবে না।
‘ভালবাসা’ এই শক্তিশালী অনুভূতি যা দুই পক্ষ থেকে একটা ভারসাম্য বজায় রেখে এগোলে সম্পর্ক টা ভালো থাকে। যখন ভারসাম্যহীন হয়ে পরে তখনি বিচ্ছেদ শুরু হয়। ধীরে ধীরে দূরত্ব তৈরি হয়। এক সময় কষ্ট পেতে শুরু করি ভীষণভাবে। নিজে নিজে কষ্ট বানাই, দুঃখ বানাই এবং সবার আড়ালে কাঁদি।

ব্রেক-আপ পরবর্তী যেভাবে এগিয়ে যেতে পারেন — Heartbroken After a Break Up?



আপনি যাকে এতো দিন ধরে চিনে আসছেন তাকে এখন নতুনভাবে চিনতে শুরু করেছেন। হয়তো আপনার সাথে প্রতারণা করেছে। আপনি মেনে নিতে পারছেন না। আত্মার ভিতর প্রচণ্ড ঘৃণা এবং প্রতিশোধ জমতে শুরু করেছে। যে কোন সময় তা বিস্ফোরিত হতে পারে।
স্টেপ #০১. আপনাকে বলছি, এক ধাপ পিছনে আসুন। চেয়ারে বসে ঠাণ্ডা মাথায় ভাবুন। যাকে এতো ভালবাসলেন তাকে পাবার জন্য এবং তার খুশির জন্য এতো দিন কীনা করেছেন! ঠিক একইভাবে- নিজেকে ভাল এবং খুশির জন্য কী কী করবেন তা ঠিক করুন।
আপনার প্রিয় মানুষটি যে কারনেই চলে যাক; আপনি তো আপনার অবস্থানে ঠিক ছিলেন অথাবা আপনার অবস্থান তাকে বোঝাতে ব্যার্থ হয়েছেন। এখন আপনার উচিৎ নিজেকে নতুনভাবে জানা। আপনার ভাবনার কেন্দ্র জুড়ে শুধু আপনি এবং আপনার অবস্থান। নিজের ভাললাগা এবং মন্দলাগাগুলো খুঁজে বের করুন।
কিছু উদাহরণ দেয়া যাক।
আমার ভাল লাগাগুলো হল-
- ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে ভাললাগে,
- প্রশংসা পেতে ভাললাগে,
- মন দিয়ে চলতে পছন্দ করি।
আমার যা ভাললাগে না-
- অন্যকে কষ্ট দিতে ভাললাগে না,
- অন্যকে না বুঝে বিচার করতে ভাললাগে না,
- কেউ আমার উপর কর্তৃত্ব করুক; তা চাই না,
- মুখোশ পরতে ভাললাগে না।
আমি কিছু নমুনা দিলাম মাত্র। আপনি নিজে ভাল জানেন বা জানার চেষ্টা করুন।
স্টেপ #০২. রিলেশনশীপ এক্সপার্টরা বলেন, সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার পর কিছু দিন No Contact Rule এ থাকতে। সময়টা ৪-৫ সপ্তাহ হতে পারে। এই সময় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখে সম্পূর্ণ নিজের উপর Focus দিতে বলেন।
এই Focus টা কোথায় দিবেন? অবশ্যই নিজের ভুল ত্রুটির উপর। আপনার প্রিয় মানুষের ভুলগুলো নোট করে রাখতে পারেন। যাতে যোগাযোগ হবার পর তা বুঝিয়ে বলতে পারেন। তবে একতরফা তাকে দোষ দিয়ে যাবেন না। নিজের ভুলগুলো আগে বের করুন। কিছু না কিছু তো গড়মিল ছিলো।
যাইহোক, নিজের উপর Focus বাড়াবেন এটা প্রথমত জরুরী। Focus বাড়াতে করনীয় কী?
  • মন থেকে বের করে আনুন আপনার ব্যক্তিত্ব কেমন হবে।
  • আপনার কাছে আদর্শ জীবনযাপন মানে কী এবং কেমন হতে পারে তা নিজের সাথে বোঝাপড়া করে লিখে ফেলা।
  • ৩ টি জিনিসের সমন্বয় করতে চেষ্টা করুন। জীবনের উপকরণ, পরিবেশ এবং আত্মশক্তি।
সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার Major Cause টা যদি Logical & Changeable হয়; তবে পরিবর্তন করুন। এর পর Politely যোগাযোগ করুন। আপনার এই ইতিবাচক পরিবর্তন হয়তো আপনার প্রিয় মানুষটির হৃদয়ে নাড়া দিতে পারে। যদি ইতিবাচক সারা পান হয়তো সম্পর্ক টি নতুনভাবে শুরু হতে পারে। যদি পুরনো সম্পর্ক নতুনভাবে শুরু হয়; তবে আপনাদের উচিৎ হবে নতুন সম্পর্কের মত আচরণ করা। পূর্বের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়ে গেছে। সেগুলো যেন বর্তমানে কোন ধরণের প্রভাব না ফেলে।

স্টেপ #০৩. আমাদের সবার ভিন্ন ভিন্ন আবেগ ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতির জন্য তৈরি হয়। যেমন ধরেন- রাগ একধরনের আবেগ। রাগের তীব্রতা বেশি হলে আমারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না অনেক সময়। অনেক খারাপ কিছু করে বসি। যা একেবারেই সমীচীন নয়।
আমাদের এই ধরণের আরো Emotion তৈরি হবে। কিত্নু সেই মুহুর্তে কী করনীয়? যা করলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ভাল থাকা যায়?
আরো স্পষ্ট করে বললে- Depression কখন আসে? এই স্টেজ টা কখন আমাদের জীবনে ভয়াবহ রুপ নেয় জানেন? Sadness থেকে Depression তৈরি হয়।
অনেকদিন ধরে Sadness এ থাকতে থাকতে আমরা প্রচণ্ড রকমের Depression এ ভুগি। যা আপনার জীবন অতিষ্ঠ করার জন্য যথেষ্ট।
একটা সম্পর্ক একদিনে হঠাৎ করে শেষ হয় না। ধীরে ধীরে চির ধরে। দুঃখ-কষ্টগুলো জমতে থাকে। সে সময় এক পক্ষ অপর পক্ষের সাথে হয়তো খোলাখুলি আলোচনা করে না। অথবা করলেও সমস্যা টা আরও বাড়তে থাকে। এই Sadness থেকে Depression এ চলে যায়। যে পক্ষ যায় অপর পক্ষ হয়তো বুঝতেও পারে না। যখন হঠাৎ করে সম্পর্ক শেষ হয় তখন দুই জনের মতামত ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
স্টেপ #০৪. নেতিবাচক আবেগ আপনাকে যখন কষ্ট দিচ্ছে, তখন আপনি অনুধাবন করুন। এই Pain আপনাকে একটা Direction দিবে। আমরা Instant Pain কে Instant Pleasure এ নিতে চাই। আসলে এই প্রক্রিয়া টা ক্ষণিকের জন্য ভাল হলেও, পরে আবার Pain হয়। সুতরাং একে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করুন।
Massive Pain কে Massive Pleasure এ পরিবর্তন করতে হলে কী কী করা প্রয়োজন বলে মনে করেন? আপনার তীক্ষ্ণ মস্তিষ্কে প্রশ্ন করুন। Human Brain এমন একটা Powerful অংশ আপনি যেমন প্রশ্ন করবেন- তেমন উত্তর বের হবেই (অবশ্যই Logical প্রশ্ন করতে হবে)
আমরা যখন প্রশ্নগুলো করি এর উত্তর আমাদের পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে বের হয়। ভাবনার জগৎ টা আরো কিছুটা বিস্তৃত করতে হবে। যত ভাল প্রশ্ন করতে পারবেন; তত ভাল উত্তর পাবেন।
নিরপেক্ষভাবে বিবেচনা করুন। ধরেন আপনার বন্ধু এমন অবস্থায় থাকলে আপনি কী কী করার পরামর্শ দিতেন। তা একটা কাগজে লিখে ফেলুন।
স্টেপ #০৫. ‘Belief’ এমন একটি Emotion আপনি যাকে Belief করেছিলেন; তার কৃতকর্মের জন্য তার প্রতি সেই বিশ্বাস আগের জায়গায়তে নেই। তখন আপনার মনে একটা ভাবনা জন্ম নেয়- সব মানুষই এমন! ছেলেরা গণহারে মেয়েদের দোষ দেয়। মেয়েরাও ছেলেদের গণহারে দোষারোপ করতে থাকে।
আসলেই কী তাই? আপনার এতো শক্তিশালী Emotion ‘বিশ্বাস’ শুধুমাত্র একজন অথবা দুইজন মানুষের আচরণে পরিবর্তন হয়ে গেলো? এতেই বুঝা যায় আপনার বিশ্বাসের ভিত্তি নড়বরে। মনে রাখবেন- পূর্বের অভিজ্ঞতা শুধুমাত্র একটি ঘটনার ভ্রান্ত ধারণা।
‘বিশ্বাস’ জন্ম নেয় কিছু পাওয়ারফুল রেফারেন্সের ভিত্তিতে। যেকোনো বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করতে বিভিন্ন রেফারেন্স পয়েন্ট যুক্ত করুন। আপনার রেফারেন্স যত মজবুত হবে আপনার বিশ্বাস তত শক্তিশালী হবে।
যেমন — একটি চেয়ারের চার টা পায়া থাকে। পায়াগুলো হচ্ছে চেয়ারের রেফারেন্স পয়েন্ট। যার মাধ্যমে চেয়ার টি একটা শক্ত অবস্থানে ঠায় দাড়িয়ে। যদি পায়া দুটো থাকতো অবথা পায়াগুলো নড়বরে থাকতো তাহলে কী হতো তা নিজেই বুঝুন।
স্টেপ #০৬. জীবনের Metaphor বা রূপক কী? ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্ন Metaphor জন্ম নেয়। খেয়াল করে দেখেন এটা কিভাবে বদলে যায়- কষ্টে থাকলে মাঝে মাঝে বলে উঠেন “জীবন টা এমন কেন! সব স্বার্থ দ্বারা মোড়ানো” অথবা “জীবনটাই কষ্ট দিয়ে ঘেরা”। ঠিক তেমনি ভাল মুহুর্তে তা অন্যরকম হয়- “লাইফ ইস বিউটিফুল”

Metaphor এর একটা উদাহরণ দেই — “জীবন হলো সৃষ্টিকর্তার অমূল্য উপহার। এর সর্বোচ্চ যত্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।” 

আমি যে Metaphor টা লিখলাম, এটা কিধরণের প্রভাব ফেলছে আমার অনুভূতিতে? খুব ভাল একটা অনুভূতি দেয়। মনে সাহস যোগায়। এগিয়ে যাওয়া এবং জীবনকে উপভোগ করার প্রেরণা পাই। আশেপাশের মানুষের জন্য কাজ করে যাবো এমন উদ্দীপনাও পাই।
তো আপনার জীবনের Metaphor কী? বর্তমান পরিস্থিতির জন্য তা কি পরিবর্তন হচ্ছে? পরিবর্তন হোক, তবে যেন নেতিবাচক না হয়। আপনি ঠিক করে নেন আপনার জীবনের Metaphor
স্টেপ #০৭. একটা কথা আমরা কম বেশি শুনে থাকি- “যে নিজেকে ভালবাসে না, সে অন্যকে কিভাবে ভালবাসবে।” অথবা “নিজেকে জানার চেষ্টা কর।” এতে মনে হয়- আমি তো নিজেকে জানি, আর কিবা জানার বাকী আছে?
আপনি সত্যি যদি নিজেকে জানেন; তবে কেন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না? কেন Emotion গুলোকে প্রশ্রয় দিয়ে কষ্টকর জীবনযাপন করছেন?
এখন প্রশ্ন আসতে পারে- তাহলে করনীয় কী?
প্রতিটি Emotion, হোক সেটা ইতিবাচক অথাবা নেতিবাচক সেগুলোর একটা তালিকা তৈরি করেন। এবং সেগুলোর Definition নিজের মত করে লিখুন। নিজেকে জানা অথবা ভালবাসা মানে- নিজের প্রতিটা Emotion সম্পর্কে জানা।
কোন Emotion আপনার জীবনে কিধরণের প্রভাব ফেলছে তা স্পষ্টভাবে জানা। সেই সাথে নেতিবাচক আবেগের বিপরীতে কী কী করলে আপনি ভাল Feel করেন এবং ইতিবাচক আবেগগুলোর সাথে আরো কী কী কাজ বা চিন্তা করলে আরো ভাল Feel করবেন সেটাও লিখে ফেলুন।
আমাদের অনেক অনেক Emotion আছে যেমন- রাগ, অভিমান, ভয়, স্ট্রেস, স্যাডনেস, ফ্রাস্ট্রেশন, ডিপপ্রেশন।
একটা উদাহরণ দেই আরো স্পষ্ট হবার জন্য- ধরেন, আমার খুব মন খারাপ। খুব কষ্টে আছি। যেটাকে আমি সংজ্ঞায়িত করলাম Sadness হিসাবে।
তো আমি যা করি- কেন কষ্টে আছি এর কারন খুঁজি। কারনগুলো লিখে ফেললাম-
  • আমার এক্স-গার্ল ফেন্ড এর কথা মনে পড়ছে।
  • তার সাথে কাটানো অনেক ভাল স্মৃতি ছিল।
  • কিন্তু শেষ করে গেলো সব।
  • হয়তো ওর মত আমায় কেউ ভালবাসতে পারবে না।
  • ওর মত কাওকে পাব না।
এখন চেয়ারে বসে এই চিন্তাগুলোর সত্যতা যাচাই করে দেখি- এ সবি আমার অনুমান ছাড়া কিছুই না।
প্রিয় মানুষটির কথা মনে পড়বে এটা অস্বাভাবিক না। ভাল স্মৃতি মনে পড়ে কী খারাপ লাগার কথা? কষ্ট পাবার কথা? আমি সেই মানুষটির আচরণে কষ্ট পেয়েছিলাম। বিপরীতে আমি যেন ঠিক একই আচরণ না করি সেটাই মুখ্য ব্যাপার। আমার চিন্তা-ভাবনা এবং কর্মকাণ্ড যেন উত্তম মানসিকতার হয় তাও মাথায় রাখি।
Sadness টা নিয়ন্ত্রণ করতে আমি যেভাবে চিন্তা করি-
  • সে যা বলে গেলো; আমি তো এমন না। তার ধারণা ভুল ছিল। আর যেহেতু তাকে বোঝানোর মত যোগাযোগ বা সেই সুযোগ নেই। সুতরাং এখানেই সমাপ্তি।
  • তার ভালবাসার তীব্রতা যদি খুব বেশি থাকতো; তবে চলে যেতো না।
    যেখানেই থাকি কিছু কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখি। যদি কাজ না থাকে-রাস্তায় বের হয়ে কানে হেডফোন গুজে প্রিয় কিছু গান শুনি। অথবা বই পরি।
  • বন্ধু-বান্ধবের সাথে সময় থাকলে দেখা করি। আড্ডা দেই। আর অবশ্যই আমার Sadness এর কারণটা নিয়ে আলোচনা করি না। তাহলে আড্ডাটাই পানসে হয়ে যায়।
  • নামাজের সময় হলে, তা আদায় করি।
এই কাজগুলো করলে আমি খুব দ্রুতই Sadness থেকে বের হতে পারি। আমি শুধুমাত্র উদাহরণ দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করলাম। গ্রুপে অনেকেই পোস্ট করেন কষ্ট থেকে বের হব কিভাবে বা কষ্ট ভুলতে কী করা উচিৎ। আপনিও চেষ্টা করে দেখতে পারেন। আপনি কিভাবে নিজের Emotion গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
এবার আসি শুরুতে কিছু প্রশ্ন এবং সম্ভাব্য উত্তর দিয়েছিলাম মনে আছে নিশ্চয়। ব্রেক-আপ হবার পর আমরা নিজেদেরকে সঠিক সময় না দিয়ে খুব দ্রুতই অন্য আরেকটা সম্পর্কে জড়িয়ে যাই। একটু সময় নিন। ক্ষতটা সারতে সময় নেয়ার প্রয়োজন আছে। নিজেকে জানার এই সুযোগ টি কেন হাতছাড়া করবেন। এতো দিন ছেড়ে যাওয়া মানুষটিকে বুঝতে চেষ্টা করেছেন। এখন নিজেকে নতুনভাবে বুঝুন। এটা বলতে পারি- আপনি তো আর আপনাকে ছেড়ে যাচ্ছেন না।
একটা বার চিন্তা করুন- আপনার কিউট একটা বাবু আছে। তার দেখাশোনা আপনি করেন। তার প্রতি মায়া-মহব্বত অনেক। সে যাতে কষ্ট না পায়; সেদিকে আপনি সর্বদাই সোচ্চার। ঠিক একইভাবে নিজেকে বাবুর জায়গায় ভাবেন, এবং আপনি আপনার দেখাশোনা করেন। আপনি নিশ্চয় বাবুর খারাপ চাবেন না। তেমনি নিজের খারাপ হোক তাও চাবেন না। দেখবেন আপনি আরো উন্নত হচ্ছেন।
The Niagara Syndrome — নামে একটি পরিস্থিতির কথা বলেছেন বিখ্যাত সেলফ-হেল্প লেখক Tony Robbins, আমরা অনেক সময় এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি; ঠিক নায়াগ্রা জলপ্রপাতের মত। জল গড়িয়ে নদীতে মিশে যাচ্ছে এবং একটা Flow এর মধ্যে চলে অবিরাম। কোথায় যাবে বা কোথায় থামবে তার কোন Destination থাকে না। ঠিক এমন কিছু সিদ্ধান্ত আমরা নিয়ে ফেলি এবং ভবিষ্যতে দিকভ্রান্ত হয়ে ভাগ্যের উপর দোষ দেই। এখন এখান থেকে বের হবার সিদ্ধান্ত আপনার।
পরিশেষে একটা কথা বলি, আপনার ভাল থাকার জন্য হলেও তাকে ক্ষমা করে দিন। সে ভাল থাকুক এই কামনা করুন। বিশ্বাস করুন, আপনি নিজেও ভাল থাকবেন। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো। ভাল থাকবেন সবসময়।
প্রথম প্রকাশঃ মিডিয়াম.কম