ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনা, ইতিবাচক পরিবর্তন
আমরা প্রভাবিত হই সময়, পরিবেশ, মানুষের আচার-আচরন, কথাবার্তায়। তবে সবসময় যে ভালো কিছুর জন্য হই তা নয়, খারাপ কিছুর দ্বারাই বেশি প্রভাবিত হই। অনেক সময় এতোটাই প্রভাবিত হই, আমরা নিজেদের ভুলে যাই, নিজের চিন্তা-ভাবনার জলাঞ্জলি দেই। ভাবি হয়তো সেটাই সঠিক। প্রকৃতপক্ষে আমারা সবসময় সঠিক এবং নির্ভুল জিনিসটি বুঝতে পারি না। হয়তো পরিবেশটাই ঘোলাটে হয়ে যায় এই কারণেই।
আমরা অনেক সময় নিজেদের চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমেই প্রভাবিত
হই। যত ভালো চিন্তা-ভাবনা করব ততোই ভালোভাবে গড়ে উঠবো। ইতিবাচক চিন্তার ফলে মানুষ
তাঁর নিজেকে পরিবর্তন করে। আসলে এই ব্যাপারটি মনস্তাত্ত্বিক ভাবে অবচেতন মনে তা
ফুটে ওঠে। সুতরাং ভালো এবং ইতিবাচক চিন্তা করাটাই শ্রেয়। একটি বিষয় খুব প্রকট তা
হল- আমারা অন্যের নেতিবাচক গুন, আচার-আচরণ এবং
চিন্তাগুলোকেই বেশি লক্ষ্য করি, সেই সাথে তাদের কে সেই
অনুপাতে বিচার করি। তবে প্রশ্ন হল- আমরা অন্যের বিচার করার সেই অধিকারটুকু রাখি?
মানুষের মধ্যে অনেক ইতিবাচক এবং ভালো গুন রয়েছে সেগুলোকে
খুব কমই নজর দেয়া হয়। আমারা কি পারি না- অন্যের ভালো গুনগুলোকে মনে করিয়ে তাঁর
প্রসংশা করতে। কারণ মানুষ প্রসংশা পেতে পছন্দ করে, আর ভালো কাজের কিংবা ভালো গুনের জন্য যদি প্রসংশা পায়, তাহলে তাঁর ভিতরে আরও ভালো কাজ করার আগ্রহ, ভালো
গুন জন্ম নিবে। এতে করে তাঁর মানশিকতা উন্নত থেকে উন্নতর হবে।
সম্প্রতি এক একদল বিজ্ঞানীগণ কিছু তথ্য-উপাত্তের
ভিত্তিতে এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ পর্যালোচনা করে বলেছেন, তিনটি ইতিবাচক অনুভূতির বিপরীতে একটি নেতিবাচক অনুভূতি
রয়েছে। সেই অনুপাতে ৩:১ হয়। এই অনুপাতই
আমাদের ভবিষ্যতের চিন্তা-ভাবনার উৎস হিসেবে মনস্তাত্তিকভাবে কাজ করে।
মনস্তত্ত্ববিদরা মনে করেন, মানুষের ইতিবাচক অভ্যাসই
পারে ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনার জন্ম দিতে এবং ভালো কাজ করার মানুষিক প্রেরণা দিতে।
কিন্তু বেশিরভাগ সময় আমারা অসচেতন থাকি। যার ফলে আমাদের মস্তিস্ক নেতিবাচকতার
প্রতি টেনে নিয়ে যায়। সতরাং সচেতনভাবেই চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।
ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য কিছু প্রশ্নের উত্তর নিজ থেকেই
জেনে নেয়া যেতে পারে। যেমনঃ-
- ১. নিজের জন্য সত্যিকার অর্থেই কি করতে চাই?
- ২. বর্তমান জীবনযাপনে কী কী পরিবর্তন আনা উচিৎ?
- ৩. ইচ্ছাকৃতভাবে কী কী অভ্যাসের পরিবর্তনের প্রয়োজন?
ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য কিছু বাক্য সাজিয়ে নেয়া যেতে
পারে, যা মনে মনে স্মরণ করে আত্মবিশ্বাস
বাড়বে। যেমনঃ-
- ১. আমার পছন্দের মূল্য রয়েছে,
- ২. চলো শুরু করা যাক,
- ৩. সামনে যা আছে সেটাকেই গ্রহণ করে এগিয়ে যাওয়া,
- ৪. অন্যকে কিভাবে সাহায্য করা যায়?
- ৫. ধীর গতিতেই এগিয়ে যাওয়া ভালো,
- ৬. আমার সুখি হবার অনেক কারণ রয়েছে।
কিছু শব্দ দিয়ে নিজের মনে কিছু ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
আয়ত্ত করা যেতে পারে। একটি নমুনা দেখানো হল মাত্র।
আমার সকাল হলে, আমি
সম্ভাবনার দুয়ার খুলি,
আমার অস্তিত্বকে অনুভব করি এবং উজ্জাপন করি,
নিজেকে প্রতিযোগী মনে করে নিজেকেই আলিঙ্গন করি,
প্রসংশা করি জীবনের পরিপূর্ণ মুহূর্তগুলোকে।
সত্যকে শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করি, এভাবেই বাঁচি-
পূর্ণ করি নিজের সুখের ঝুলিকে,
যা ঘটে তাই মেনে নেই, বাক্য
ব্যয় করি না।
অন্যকে খুশি করি, একটি
প্রাণবন্ত হাসি দিয়ে।
একটু অন্যভাবে দেখি, যখন
কাছের কিংবা দূরের কেউ আমাদের সম্পর্কে কিছু নেতিবাচক মন্তব্য করে। আমরা তাৎক্ষনিক
বাকবিতণ্ডায় না গিয়ে তাদের মন্তব্যগুলো মূল্যায়ন করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি।
আমারা অন্যের কাছ থেকে নিজেদের সম্পর্কে যা শুনি তা সবসময় সত্য কিংবা নির্ভুল হবে
তা নয়, এর সচ্ছতা কতোটুকু তাও বের করার মানসিক প্রস্তুতি
নেয়া এবং অনুশীলন করা অত্যন্ত জরুরী। অনেক সময় অনেক নেতিবাচক কথা দ্বারা নিজের মনে
এক ধরনের রাগ এবং ক্ষোভের জন্ম দেয়, সেই সময় মনে রখতে হবে
সেই কথা গুলো এবং সেই মানুষগুলো আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। কেন আপনি অন্যের প্ররোচনায়
নিজে অনিয়ন্ত্রিত হবেন! বস্তুত পৃথিবীর সকল মানুষের জীবনে কিছু সাধারণ সমস্যা এবং
সাধারণ চিন্তা-ভাবনা এসে ভীর করে। সেই সমস্যাগুলো একই প্রজাতির। তবে সময়, পরিবেশ এবং ব্যাক্তি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
মনে রাখতে হবে, আমাদের
নিজেদের নেতিবাচক অনুভূতিগুলো যেন আমাদের নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, আমরাই আমাদের নেতিবাচক অনুভূতিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করব। সুতরাং অভ্যাস
করার মানুষিক প্রস্তুতি নেয়া আবশ্যক। ভালো থাকবেন সবসময়।