সময় এবং পরিবেশ আত্ম-উন্নয়নের দুটি প্রধান উপাদান
আত্ম-উন্নয়ন ব্যপারটি সম্ভবত ঘোড়ায় চড়া কিংবা মোটর বাইক চালানোর মতো। মাঝে মাঝে এর গতি বৃদ্ধি পায় আবার গতি শূন্যও হয়। এর ধারাবাহিকতা অবশ্যই কিছুটা ভিন্ন হয়ে থাকে। তার কারণ হিসেবে প্রধান দুটি অবস্থার সন্ধান পাওয়া যায়- ‘সময় এবং পরিবেশ’।
আপনি যদি ঘোড়া অথবা মোটর বাইক আরোহী নাও হয়ে থাকেন, তবুও একটি যোগ-বিয়োগ মিলানোর চেষ্টা করুন। মোটর বাইক এবং
ঘোড়াতে যেমন গতি কমানোর জন্য এক্সেলেটর ও লাগাম থাকে, তেমন আত্ম-উন্নয়নে "সময় এবং পরিবেশ" গতি'কে রোধ করে।
আমার নিজের ব্যক্তিগত মতামতই বলতে
পারেন। কিছু দিন আগে তা আমি নিজেই অনুধাবন করেছিলাম। আত্ম-উন্নয়নের জন্য ৯০ দিনের
একটি খসড়া করেছিলাম। পরবর্তী ৩০ দিন পার হবার পর বুঝলাম আমার পরিকল্পনা একদিকে আর
আমি অন্যদিকে। হুলুস্থুল চিন্তা-ভাবনায় কিছুটা পরিবর্তন এনে ৩০ দিনের জন্য
পরিকল্পনা করলাম, ঠিক আগের মতোই এবারও ব্যতিক্রম নয়, আমি অন্য পথে হাঁটছি। সর্বশেষ পরিকল্পনা ৭ দিনের জন্য ঠিক
করলাম। খুব দুঃখজনক হলেও বাস্তব, আমি প্রতিবারই আমার গতি বাড়াতে তো
দূরে থাক তা শুরুই করতে পারি নি।
সময় এবং পরিবেশ
সব ফেলে খুব হতাশা হয়ে ভাবতে
লাগলাম। কোথায় সমস্যা তা খুঁজে বের করার জন্য। কিছু কিছু ব্যপার উদ্ধার করতে সক্ষম
হয়েছি। যা প্রকৃতপক্ষে আগামীর অগ্রগামী হিসেবে আমায় সাহায্য করবে। প্রধানত দুটি
ব্যপার যা আমি আগেই উল্লেখ করেছি, তা হলঃ "সময় এবং
পরিবেশ" এই সুন্দর জিনিস দুটো
নিজের আয়ত্তে আনতে পারলে কোন পরিকল্পনাই বৃথা যাবে বলে মনে হয় না। অনেক অনেক
জল্পনা-কল্পনার জাল আমরা নিজেরাই বুনে থাকি। যা কল্পনায় খুব মধুময়, সুন্দর এবং আকর্ষণীয় কিন্তু বাস্তব তার ঠিক উলটো। বাস্তবে
আমরা জাল বুনতে পুরদমে ব্যর্থ হয়ে থাকি। শুধু মাত্র কল্প রাজ্যেই তা সাজানো-গোছানো
থাকে।
"সময় এবং
পরিবেশ" নিয়ে রচনা লেখা এবং পড়ার মতো ধৈর্যে কুলাবে না তা ভাল
করেই জানি। এই দুটি অবস্থা
নিজের অনুকূলে ঠিক মতো থাকে না এবং ভবিষ্যতে থাকবেও না। তাই নিজেকেই তৈরি করে নিতে
হবে। আপনার কাজ, যেটা আপনার আত্ম-উন্নয়ন করতে সাহায্য করবে। তার জন্য
"সময় এবং পরিবেশ" আপনাকেই তৈরি করতে হবে। কিভাবে করবেন তা নির্ভর করে
আপনার কাজের উপর।
সময় এবং পরিবেশ নিজের করে নেয়ার
জন্য আগ্রহ তৈরি করতে হবে। আর আগ্রহ বাড়ানোর আকর্ষণীয় পদ্ধতি বা কৌশল হতে পারে
"আশ্চর্য"।
আগ্রহ বাড়ানোর একটি কৌশলঃ
আশ্চর্য!!!
কর্ম-প্রেরণা একটি গুরুত্বপূর্ণ
ব্যপার। যা আপনাকে আপনার কাজে মনোযোগী করে তুলবে ধীরে ধীরে। আর এর মধ্যে একটি
অত্যাবশ্যকীয় উপাদান আছে, তা হল "আগ্রহ" নিজেকে আগ্রহী করার একটি গোপন
কৌশল আছে যা আপনাকে ধীরে ধীরে আগ্রহী করে তুলবে। সেটা হলঃ "আশ্চর্য"।
নতুন কিছু করা বা জানার মাঝে
অবশ্যই আনন্দ থাকতে হবে। তবেই না তার স্বাদ নিত্য নতুনভাবে কিছু করা বা জানার
ইচ্ছেটা বহাল থাকবে। এইতো কিছু দিন আগে ঘটনা- এক ভদ্র লোক কথা প্রসঙ্গে বলেন, "জানেন
দারজেলিং এ টাইগার নামে একটি পাহাড় আছে।" প্রতিউত্তরে আমি খুব আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললাম, বলেন কি... টাইগার হিল!
সেই দিনই বাসায় এসে দারজেলিং এবং
"টাইগার হিল" সম্পর্কে বেশ কিছু ব্লগ এবং ছবি দেখে নিলাম। একটা গোপনীয়
সত্যি কথা বলে ফেলি, আমার খুব বেড়াতে যেতে ইচ্ছে করছে। এতো সুন্দর জায়গা বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে বেড়িয়ে আসলে
মন্দ হবে না। যাইহোক সেই ভদ্র লোকের কথার প্রতি উত্তরে আমি যদি আশ্চর্যিত না হয়ে
বলতাম, অহ..., আচ্ছা। তাহলে কখনই বাসায় এসে তার
অনুসন্ধান করতাম না অথবা আমার আগ্রহের মূল উৎপাটন তখনি হয়ে যেত।
এর থেকে বুঝায় যাচ্ছে, অনুসন্ধানী হতে হবে। আশ্চর্য হতে হবে। নিজের মনকে নাড়িয়ে তুলতে
হবে। আগ্রহের বীজ বুনতে হবে এবং তা সর্বদাই পরিচর্যা করতে হবে। সবজান্তা'র মতো চোখ টিপে
টিপে শুনলে হবে না। দাঁত কেলিয়ে হাসলে হবে না। বুঝতে হবে, জানতে হবে।
উদাহরণ হিসেবে বলি, আপনি বিদেশী ভাষা শিখতে
চাচ্ছেন। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই সময় নির্ধারণ করবেন।
সাথে সাথে আপনার পরিচিত যারা আছে তাদের মধ্যে থেকে দুই এক জন'কে নিজের সঙ্গী
হিসাবে বাছাই করুন। যারা ঠিক আপনার মতোই সেই বিদেশী ভাষায় দক্ষ হতে চায়।
একটু খেয়াল করে দেখবেন, যে কোনো কাজ মিলেমিশে করলে তার ফলাফল খুবি ভাল হয় (কিছু
কছু কাজ একাই করবেন) আসুন একটা ছোট্ট হিসেব কষি। ধরুন, আপনি এবং আরও দুই জন যারা
আপনার ঘনিষ্ঠ কেউ। বিদেশী ভাষায়
নিজেদেরকে দক্ষ করতে সময় নির্ধারণ করেছেন। এই তিন জনের কাজের গতি এবং আগ্রহ এক নয়।
এটাই স্বাভাবিক। কিছুটা কম বেশী হবেই। মাঝে মাঝে এমন হয়, যার গতি শূন্যতে চলে যায়। ঠিক তখন অপর দুইজনের গতি আপনার
গতিকে কিছুটা হলেও এগিয়ে আনবে।
সুতরাং, নিজের উন্নয়নের সাথে সাথে আপনার আশেপাশের মানুষগুলোর আত্ম-উন্নয়নে
সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। আগ্রহ সহিত "সময় এবং পরিবেশ" তৈরি করে নিজের
আত্ম-উন্নয়নে নিয়োজিত থাকুন।
পরিশিষ্টঃ ব্যক্তিগত
ব্যপার উল্লেখ করার একটাই উদ্দেশ্য যাতে আপনি বুঝতে পারেন অথবা আমি আপনাকে বুঝাতে
পারি।