'প্রশংসা' আদান-প্রদান এবং মনের অন্তঃস্থলের অনুধাবন


'প্রশংসা' আদান-প্রদান এবং মনের অন্তঃস্থলের অনুধাবন


প্রতিটি জাতি, সংস্কৃতি, ধর্মে কিছু বিশেষ দিন রয়েছে, যে দিনগুলোতে আমরা নিজেদেরকে নিয়ে উদযাপন করতে পারি। সাধারণত এই বিশেষ দিনগুলো আমাদের জন্য আমোদের দিন অথবা ছুটির দিন হিসাবে গণ্য হয়। অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা ব্যস্ততা কম থাকে। এমন দিনগুলো বারবার আসে না, এই ভেবে আমরা কি কখনো বিস্ময়বোধ করেছি? আমাদের আবেগের জায়গা থেকে একটু চিন্তা করলেই তা বোধগম্য হবে।


আবেগি হয়েই বলতে হয়, ছুটির দিনগুলো আমাদের জন্য পুরস্কার স্বরূপ। অন্যান্য দিনে যেমন কাজের চাপ, মানসিক চাপ ইত্যাদি আমাদের ঘিরে রাখে, তেমনি ছুটির দিনে পুরোটাই বিপরীত, তাই নয় কি? আমরা বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘোরাঘুরি, খাওয়া-দাওয়া এবং খুব আনন্দ করতে পারিজীবনের জন্য হলেও কিছুটা সস্থির নিঃশ্বাস এবং পরবর্তী কর্ম দিনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে এর অবদান কম নয়। এবং এটা অবশ্যই ‘পুরুস্কার’ হিসাবে গণনা করতে হবে। আমাদের প্রেরণা, উদ্দীপনা, চঞ্চল করতে ছুটির দিনকে মন দিয়ে উদযাপন করা যেতে পারে।

কিছু পুরস্কারের পার্থিব মান থাকলেও আবেগের মানদণ্ডে তা খুবই নগণ্য বলা চলে। কিছু মানুষ যদিও পার্থিব মানটাকেই প্রথম স্তরের মূল্য দিয়ে থাকে, তবে এতে নিজের আনন্দের উৎস কমই থাকে। অন্যদিকে, যারা নিজেদের সুখি এবং ভাগ্যবান মনে করেন তাঁদের নিকট পার্থিব মানটাকে গৌণ হিসেবে বিবেচনায় আনে। সুতরাং আমাদের পরিপক্বতাই এই দুয়ের মাঝে পছন্দের বিষয়টি নির্বাচন করতে সাহায্য করবে।

একটু অন্যভাবে বলি, যখন আমারা ভালো কিছু করি, তখন হয়তো কারও ভালবাসা এমনকি মন খোলা একটি হাসি আমাদের খুব আনন্দিত করে। অন্যের ভালোলাগায় নিজেরা সুখ অনুভব করি। এই অপার্থিব সুখ আমাদেরকে আরও ভালো কিছু করার পেছনে উৎসাহ দেয়, উদ্দীপনা দেয়। এবং এটাই আমাদের মনুষ্য জীবের প্রধান বৈশিষ্ট্য, নিজেদের ভালোবাসা-ভালোলাগা আদান-প্রদান করা


আবারও কিছুটা ভিন্নভাবে বলি, আমরা শুধুমাত্র ছুটির দিনগুলোতেই আমোদ করব না। নিজেদের ছোট-বড়-মাঝারি ধরণের কিছু প্রাপ্তি ঘটে যেগুলোকে কেন্দ্র করে আমারা আমোদপ্রমোদ করতে পারি। হোক তা ছোট্ট পরিসরে, হোক তা দুজনে মিলেই। ব্যক্তি জীবন এবং পেশা জীবনের সকল ক্ষেত্রেই আমারা এই ধরণের আনন্দ উদযাপন করতে পারি।

এই ছোট্ট ছোট্ট আনন্দই আমাদের নেতিবাচক অনুভূতিকে দূরে সরিয়ে ইতিবাচক অনুভূতিগুলোকে জাগ্রত করবে। একটু খেয়াল করলেই আমারা আরও অনুধাবন করতে পারব- কাছের কেউ যখন ভালো কিছু করে, কিংবা ভালো কিছু অর্জন করে, ঠিক সেই সময় আমারা নিজেরাই নিজেদেরকে ছোট করি। কিভাবে? একটু পরোখ করে দেখবেন, অন্যের অর্জনে নিজের অভাববোধটা সেই সময় জাগ্রত করি, তাঁকে প্রতি প্রশংসার পরিবর্তে মুখ ফিরিয়ে নেই। এতে সে যা অর্জন করল, সেটা তাঁর নিকটই রইলো। আর অযৌক্তিক কারণেই নিজের মনে নেতিবাচক অনুভূতিগুলো জায়গা করে নিলএর বিপরীতও ঘটে, যেমন- কাছের কেউ যখন ভালো কিছু করে, কিংবা ভালো কিছু অর্জন করে, ঠিক সেই সময় আমারা তাঁদের প্রশংসা করলে সে প্রশংসা গ্রহণ না করে বরং তাঁর কোথায় না পাওয়া আছে সেই হিসাব কষতে থাকে। এতে তাঁর অর্জনটাকে সে সঠিক মূল্যায়ন করল না। ভবিষ্যতের প্রেরণার উৎস ক্রমেই হ্রাস পেতে থাকবে।

আমাদের ব্যক্তিত্বকে আকর্ষণীয় করতে প্রশংসা আদান-প্রদানে যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে। নিজের যা কিছু আছে এবং যা অর্জন হবে তাই নিয়ে নিজেই নিজেকে পুরস্কৃত করতে হবে। ছুটির দিনগুলোকে নিজেদের আমোদের জন্য উপভোগ করা শিখতে হবে। নিত্য নতুন উদ্দীপনায় এগিয়ে যাওয়ার কামনা মনে পুষতে হবে। সবশেষে নিজেকে একজন ভাগ্যবান ব্যক্তি মনে করবেন।