স্কুলের ঘণ্টা (প্যাঁদানি)
১.
মিস্টার “জ” আনমনে উদাস দৃষ্টিতে জানালা ধরে দাড়িয়ে আছে। তার শোবার ঘরের দক্ষিণ পাশেই
জানালা। জানালাটা সেকেলের স্ট্রেইপ রডের শিক দিয়ে বানানো। তা প্রায় হাফ ইঞ্চির মতো
ব্যাসার্ধ। জানালার বাইরের দৃশ্যটা এমন ছিলো- নিল-কালো আকাশ, একঝাক পাখি উড়ে উড়ে খেলছিল। হঠাৎ দেয়াল ঘড়ির ঘণ্টা বাজতে শুরু করলো,
গুনে গুনে ঠিক চার’টে ঘণ্টা বাজালো। ঘণ্টা
পর্ব শেষ হতেই স্কুলের ঘণ্টার কথা মনে পরে গেলো, মিস্টার “জ” স্কুল পেরিয়েছে তা আনুমানিক ৭ বছর তো হবেই। স্কুল
মানেই দুস্টমি, বাদ্রামি, হইহুল্লর,
খেলাধুলা, ক্লাস ফাঁকি দেয়া, মারামারি ইত্যাদি ইত্যাদি। এতকিছুর মাঝে কিছুটা পড়ালেখা না থাকলেই নয়,
তাবে তার পরিমাণ খুবই নগণ্য বলা চলে। বার্ষিক পরীক্ষার না আসা
পর্যন্ত পড়ালেখার সুগন্ধ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। মিস্টার “জ”
এর কিছু কিছু ঘটনা মনের স্মৃতিপটে উঁকি দিয়ে যাচ্ছে। ঘটনাগুলো এতটাই
স্পষ্ট যে, এইতো কিছু দিন আগের মনে হচ্ছে। এই যেমন, “প” নামের ছেলেটাকে কি প্যাঁদানি না দেয়া হয়েছিলো।
ছেলেটা দোষ- “ক্লাস-৮ এ পড়ুয়া একটা ছেলে, ক্লাস-৯ এর ছেলেকে তুই বলবে কেন?” হা হা হা কতো
আত্ম-সম্মানবোধ ছিল তখন। বন্ধুরা মিলে একজনকে বেদম প্যাঁদানির মাঝে বেস মজা পাওয়া
যায়। প্যাঁদানি খেয়ে “প” ও তার বন্ধুরা
মিলে আবার পাল্টা প্যাঁদানোর চেষ্টায় থাকে। শেষমেশ যা হয়, হয়
টিচার পর্যন্ত গড়াবে নাহয় স্কুলের কোন সিনিয়র বড় ভাই যে কিনা প্রায়সই প্যাঁদানিতে
বেস্ত থাকে। অবশেষে ঘটনা ধামাচাপা পরে যায়। “প”এর ঘটনাটা অবশ্য হেডমেম থেকে গার্ডিয়ান পর্যন্ত গড়িয়েছিল। যারা
প্যাঁদানিতে অংশগ্রহণ করেছিলো তাদের সবার গার্ডিয়ানকে স্কুলে আসতে হয়েছিলো। উক্ত
ঘটনার পরিশেষ যা হয়- গার্ডিয়ানের প্যাঁদানি খেতে হয়েছিলো। :D
২.
মিস্টার “জ”এর ক্লাসের একটা ঘটনা খুব মনে পরে। স্যার অথবা মেম যে খুব প্যাঁদানিতে
পারদর্শী, তার ক্লাসে ভয়ে ভয়ে থাকতে হতো। কখন না জানি পড়া
জিজ্ঞেস করে আর প্যাঁদানি খেতে হয়। তবে স্কুলের স্যারদের দয়ামায়া কম থাকে মেমদের
তুলনায়, মেমরা মারে কম বকুনি দেয় বেশি। ঠিক এইরকম অবস্থায়
সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনায় মশগুল থাকতে হয় যেন তাড়াতাড়ি ঘণ্টা পরে। ঘণ্টা পরা
মানেই জীবন ফিরে পাওয়া।
ক্লাসের ঘণ্টা পরলে খুব ভালো লাগে আর পরীক্ষার
সময় ঘণ্টা পরলে সব দোষ ঘণ্টার উপরে চাপানো যায়। “ইস
দস্ত ... আমার যখন উত্তরটা মনে পরছে তখনি ঘণ্টাটা পইরা গেলো রে...”
হোম টিউটর কেও বলা যায়- “স্যার এই শেষ প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় ঘণ্টা পরছে তাই লেখতে পারি নাই”। তবে বলার সময় অনেক বিরহ ভাব থাকতে হবে। আফসোস থাকতে হবে।
৩.
মিস্টার “জ” এর মতে, স্কুলের কৃষি শিক্ষা জিনি পড়াবেন তার মধ্যে
একটা সবুজ পাগল ব্যাপার থাকবে, গাছ দেখলেই কাছে গিয়ে গাছের
খোঁজ খবর নিবে। ইশারায়-ইঙ্গিতে ভাব বিনিময় হবে। কিন্তু “মোকলেছ”
স্যার পুরোটাই উল্টো- তিনি ছাত্রদের স্বাস্থ্য, পোশাক-আসাক নিয়ে বেশ পাগল ছিলেন। কার শার্টের কলার ছোট, কার চুল হাফ ইঞ্চির উপরে, কার সু তে ময়লা, কে চুলে জেল দিয়ে আসছে, কার কমরে বেল্ট নাই... উফফফ
কি যে মসিবত।
“মোকলেছ” স্যার
প্যাঁদানিতে যেমন পারদর্শী ছিলেন, কান মলা দিতেও তেমনি
পারদর্শী ছিলেন। কানের কাছে চুল বড় থাকলে স্যার খুব আয়েশ করে চুল টেনে দিতো। যা
দুই-তিন দিন স্যার কে মনে মনে গালি দিতে ভুল হতো না।
৪.
ছোট ক্লাস মানে ক্লাস ১-৫ একটা মজার জিনিশ
ঘটতো। ক্লাসে টিচার না এলে, ক্লাসের ক্যাপ্টেনরা (রোল-১,২,৩) টিচারের কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে আসতো- যারা কথা
বলবে তাদের নাম বোর্ডে লিখবে অথবা লিস্ট করবে (মোস্ট ওয়ান্টেড), আর যখন স্যার বা মেম আসবে তখন নেম লিস্ট দেখে দেখে প্যাঁদানি দিবেন।
ক্যাপ্টেনরা এখান থেকেই বুদ্ধি পাকানো
ব্যাপারটা শিখাতে সহযোগিতা করে। ক্যাপ্টেনের কোন কাছের বন্ধুর নাম যদি লিস্টে এসেই
পরে ঠিক ওই সময় বন্ধুকে প্যাঁদানির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য লিস্টটা মুছে আবার
নতুন করে লিস্ট করতে থাকে। তবে ওই সময়ে ক্যাপ্টেনদের দায়িত্বটা বেড়ে যায় খুব যত্ন
করে পালন করে, তবে কোন একজনের প্রতি যদি আগে থেকেই
ঝামেলা থাকে, তার প্রতি কড়া নজরদারি করে। তবে মিস্টার “জ” বরাবরই এই লিস্টের বাইরে ছিলেন। :D
৫.
“জ” ক্লাসে একদিন
চুইঙ্গাম চিবুতে চিবুতে ক্লাস করছে। চুইঙ্গাম চিবুতে চিবুতে মিষ্টি স্বাদটা পানসে
হলেই তার মাথায় বুদ্ধির দরজা খুলে গেলো। তারই এলাকার ক্লাসমেট “ক্ষ” যার কিনা পড়ালেখাই একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান।
প্রত্যেক পরীক্ষার রেজাল্টের সময় আম্মুর (“জ” এর) প্রিয় পাত্রে পরিনিত হয়। তার জন্যই দুই-তিন দিন বাসার বাইরে যাওয়া “জ” এর জন্য নিষিদ্ধ থাকে। আম্মুর বকুনির সাথে “ক্ষ” এর প্রশংসায় “জ”কে প্রশ্নবিদ্ধ করে। কেমন করে পারে??? যেখানে পাস
নিয়েই টানাটানি, সেখানে প্লেস তো দূর থেকে বহুদূরের বিষয়।
“ক্ষ” বরাবরই মতোই
ক্লাসে মনোযোগ সহকারে ক্লাস করছিলো। পিছনের বেঞ্চ থেকে “জ”
“ক্ষ”কে উদ্দেশ্য করে শার্টের পিছনে হাত রেখে
বলে উঠলো, “ক্ষ” তোর খাতাটা দে তো
(হাতে পানসে হয়ে যাওয়া চুইঙ্গাম ছিল)।
উক্ত ঘটনার পরিশেষে, “জ”এর বাসায় বিচার আসে। অবশেষে শাস্তি স্বরূপ আম্মুর
প্যাঁদানি খেতে হয়।
৬.
দুষ্টমির চূড়ান্ত প্রশংসার শব্দ হচ্ছে “বাঁদরামি”। “বাঁদরামি” শব্দটা কোথা থেকে এসেছে তা নিয়ে এই মুহূর্তে আমি দ্বিধান্বিত (আসলে জানি
না.........:D)। তবে দুইটি প্রাণী থেকে আসতে পারে। প্রথমটা “বানর(বান্দর)” দ্বিতীয়টা “বাদুড়”
(চামচিকা = Bat-Man)।
যাইহোক, সেই বানরকে
হার মানাতেই “ব” এর প্যান্টের পিছনে
বেল্টের সাথে এক ইঞ্চি প্রস্থ নিয়ে কাগজের লেজ গুঁজে দেয়া বড়ই আনন্দের ছিল “জ”এর নিকট। বানরের মাসতুতো ভাই বলে খ্যাপানো তো আরও
মজার ব্যাপার ছিল। “ব” বেচারা প্রতিশোধ
নেবার জন্য ক্লাস টিচারের নিকট নালিশ করাতে, মিস্টার “জ”কে প্যাঁদানি হজম করার পাশাপাশি বাম হাত ডান কানে
এবং ডান হাত বাম পা ধরে ডান পায়ে দাড়িয়ে থাকতে হয়েছিলো। :D
চলবে... ()